হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, দিনসমূহের মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এই দিনে হজরত আদম (আ.) কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এই দিনে তাকে বেহেশতে দাখিল করা হয়েছে এবং এই দিনে তাকে বেহেশত থেকে বের করে (পৃথিবীতে পাঠিয়ে) দেওয়া হয়েছে এবং জুমার দিনই কেয়ামত কায়েম হবে (সহিহ মুসলিম ৮৫৪)।
জুমার দিন গোসল করা : হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাহু সাল্লাম বলেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি জুমার নামাজে যায় সে যেন গোসল করে (সহিহ বুখারি ৮৭৭, সহিহ মুসলিম ৮৪৪)।
জুমার দিন সুগন্ধি ব্যবহার ও মেসওয়াক করা : হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেন, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জুমার দিন যেন প্রত্যেক পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তি গোসল করে, মেসওয়াক করে এবং সামর্থ্য অনুযায়ী সুগন্ধি ব্যবহার করে (সহিহ বুখারি ৮৮৮, সহিহ মুসলিম ৮৪৬)।
জুমার নামাজের ফজিলত : হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হুজুর সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেন, জুমার দিন এলে ফেরেশতারা মসজিদের প্রত্যেক দরজায় বসে যান। তারা একের পর এক আগমনকারীর নাম লিপিবদ্ধ করেন। যখন ইমাম (মিম্বরে) বসে পড়েন তখন তারা নথিপত্র গুটিয়ে আলোচনা শোনার জন্য চলে আসেন। মসজিদে সর্বপ্রথম আগমনকারী ব্যক্তি উট দানকারীর সমতুল্য, তারপর আগমনকারী গরু দানকারীর সমতুল্য, তারপর আগমনকারী ব্যক্তি মেষ দানকারীর সমতুল্য, তারপরের জন মুরগি দানকারীর সমতুল্য এরপরের জন ডিম জানকারী সমতুল্য (সাওয়াব লাভ করেন) (সহিহ মুসলিম ৮৫০)।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন ফরজ গোসলের মতো ভালোভাবে গোসল করল এবং নামাজের জন্য আগমন করল, সে যেন একটি উট সদকা করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় পর্যায়ে আসল, সে যেন একটি গাভি সদকা করল। তৃতীয় পর্যায়ে যে আগমন করল, সে যেন একটি শিং বিশিষ্ট দুম্বা সদকা করল। যে চতুর্থ পর্যায় আগমন করল, সে যেন একটি মুরগি সদকা করল। প্রঞ্চম পর্যায়ে যে আগমন করল, সে যেন একটি ডিম সদকা করল। এরপর যখন ইমাম খুতবা দেওয়ার জন্য বের হন, তখন ফেরেশতারা খুতবা শোনার জন্য হাজির হয়ে যান (সহিহ বুখারি ৮৮১)।
হজরত আলি (রা.) একটি লম্বা হাদিস বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ইমাম খুতবা দেওয়া শুরু করলে যে ব্যক্তি চুপচাপ বসে শোনে সে দুটি বিনিময় প্রাপ্ত হয়। আর যে ব্যক্তি এত দূরে বসে যে, ইমামের খুতবা শুনতে পায় না, তবুও চুপ থাকে এবং অনর্থক কথা বা কাজ করে না, সে একটি বিনিময় প্রাপ্ত হয়। আর যে ব্যক্তি এমন স্থানে বসে যেখানে থেকে ইচ্ছা করলে ইমামের খুতবা শুনতে এবং তাকে দেখতে পায়, তবুও অনর্থক কথা বা কাজ করে এবং চুপ না থাকে, সে গুনাগার হবে। হজরত আলি (রা.) বলেন, আমি হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এমনই বলতে শুনেছি (সুনানে আবু দাউদ ১০৫১)।
জুমার দিনে ছয়টি আমলের বিশেষ ফজিলত : হজরত আলি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি জুমার নামাজের উদ্দেশ্যে ভালোভাবে গোসল করবে, ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে (আজানের অপেক্ষা না করে) মসজিদে যাবে, হেঁটে যাবে, বাহনে আরোহন করবে না, ইমামের কাছাকাছি হয়ে বসবে, মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনবে, (খুতবা চলাকালীন) কোনো কথা বলবে না বা কাজ করবে না, সে জুমার নামাজের (যাওয়া-আসার) পথে প্রতি কদমে এক বছরের নফল রোজা ও এক বছরের নফল নামাজের সওয়াব পাবে (সহিহ ইবনে খুজাইমা ১৭৫৮, জামে তিরমিজি ৪৯৬, সুনানে আবু দাউদ ৩৪৫, সুনানে নাসাই ১৩৮৪)।
জুমার নামাজে গুনাহ মাফ হয় : হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বরেন, যে ব্যক্তি গোসল করে জুমার নামাজে এলো, তওফিক অনুযায়ী নামাজ আদায় করল, ইমামের খুতবা শেষ হওয়া পর্যন্ত চুপ থাকল, এরপর ইমামের সঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করল, তার দুই জুমার মধ্যবর্তী দিনগুলোর গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয় (সহিহ মুসলিম ৮৫৭)।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ, এক জুমা থেকে আরেক জুমা পর্যন্ত এবং এক রমজান থেকে অন্য রমজানের মধ্যকার সব গুনাহের জন্য কাফফারা হয়ে যাবে যদি কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা হয় (সহিহ মুসলিম ২৩৩)।
জুমার নামাজ ত্যাগকারীর প্রতি সতর্কবাণী : হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) ও হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তারা হুজুর (সা.) কে তার মিম্বরের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছেন, মানুষ যেন জুমার নামাজ ত্যাগ করা থেকে বিরত থাকে। অন্যথায় আল্লাহতায়ালা তাদের অন্তরে মোহর এঁটে দেবেন, এরপর তারা গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে (সহিহ মুসলিম ৮৬৫)।