.মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক দামাত বারাকাতুহুম
আমীনুত তালীম, মারকাযুদ দাওয়াহ আল-ইসলামিয়া ঢাকা।
بسم الله الرحمن الرحيم.
الحمد لله، وسلام على عباده الذين اصطفى، وأشهد أن لا إله إلا الله وحده لاشريك له، وأشهد أن محمدا عبده ورسوله، أما بعد.
ইসলামে সবচে বড় ইবাদত এবং ঈমানের পর সবচে বড় ফরয হচ্ছে নামায। কুরআন-সুন্নাহ্য় নামায আদায়ের নির্দেশ বারবার أَقِيمُوا الصّلَاةَ ও يُقِيمُونَ الصّلَاةَ এসব বাণীর মাধ্যমে এসেছে। আর সালাত কায়েম করার অর্থ হল নামাযের ফারায়েয ও আরকান, ওয়াজিবাত ও সুনান, আদাব ও মুস্তাহাব্বাত ইত্যাদি বিষয়গুলোর প্রতি যত্নবান হয়ে নামায আদায় করা।
নামাযের মূল ভিত্তি হল, তার আরকান ও ওয়াজিবগুলো। এর মাঝে সবচে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কিয়াম, কিরাত, রুকু, সিজদা এবং কা‘দা তথা বৈঠক। আর নামাযের রূহ হচ্ছে, আদব ও তাওয়াজু এবং নম্রতা ও বিনয়ের সাথে খুশু-খুযু অবস্থায় আল্লাহ তাআলার সামনে ছোট হয়ে হাজির হওয়া। এই হাকীকত ও রূহানিয়তের প্রতি খেয়াল করলে চেয়ারে বসে নামায আদায় করার কথা কল্পনাও করা যায় না। কেননা এতে না কিয়ামের ফরয আদায় হয়, না রুকু-সিজদার ফরয; আর না এর মাধ্যমে তাশাহহুদের জন্য যমিনে বসার হুকুম আদায় হয়। আর নামাযের যে রূহ অর্থাৎ সবিনয়ে আল্লাহ তাআলার সামনে হাজির হওয়া তাও এখানে অনুপস্থিত। কারণ চেয়ার সাধারণত আরাম ও মর্যাদার আলামত; তাওয়াজু ও বিনয়ের আলামত নয়।
এজন্য নামায আদায়ের পদ্ধতি হল, নামাযের সকল আরকান, ওয়াজিবাত, সুনান এবং আদাব ও মুস্তাহাব্বাতের প্রতি যথাযথ খেয়াল রেখে নামায আদায় করা। দাঁড়িয়ে নামায আদায় করা এবং রুকু-সিজদা যথা নিয়মে আদায় করা।
নামাযে বৈঠকের যে বিধান রয়েছে তার অর্থই হল, যমিন বা সমতলে বসা। আর সিজদা, যা মূলত নামাযের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ রুকন। এর হাকীকতই হচ্ছে, শরীরের উপরের অংশ নিচু হওয়া আর পেছনের অংশ উঁচু হওয়া। সিজদার পদ্ধতি সম্পর্কে হাদীস শরীফে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন
أُمِرْتُ أَنْ أَسْجُدَ عَلَى سَبْعَةِ أَعْظُمٍ، عَلَى الجَبْهَةِ وَأَشَارَ بِيَدِهِ عَلَى أَنْفِهِ وَاليَدَيْنِ وَالرّكْبَتَيْنِ، وَأَطْرَافِ القَدَمَيْنِ.
আমাকে সাতটি অঙ্গ দ্বারা সিজদা করতে (আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে) আদেশ করা হয়েছে : (১) কপাল ও নাক। (২, ৩) দুই হাত। (৪, ৫) দুই হাঁটু। (৬, ৭) দুই পায়ের আঙ্গুলসমূহ। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ৮১২
এ হাদীস থেকে এটি স্পষ্ট যে, এই সাত অঙ্গ ব্যবহার করে সিজদা করলেই তা পরিপূর্ণ সিজদা হবে এবং আল্লাহ তাআলা এভাবে সিজদা করারই হুকুম প্রদান করেছেন। আর নিচে বসে সমতলে সিজদা করার দ্বারাই এ হুকুম আদায় হয়। চেয়ারে বসে এভাবে সিজদা আদায় করা সম্ভবই নয়।
মোটকথা, কুরআন-সুন্নাহ্য় নামাযের যে পদ্ধতি ফরয করা হয়েছে চেয়ারে বসে নামায আদায় করার ক্ষেত্রে সেই ফরয আদায় করা সম্ভবই নয়।
এখন প্রশ্ন হল, মাযূর ও অসুস্থ ব্যক্তি কী করবে? এর উত্তর হল মাযূর মুসল্লী তো আজকে প্রথম নয়। আগেও তো মাযূর ও অসুস্থ মানুষ ছিল। ওযর ও অসুস্থ অবস্থায় কীভাবে নামায আদায় করতে হবে এর তালীমও কুরআন-সুন্নাহ এবং ইসলামী শরীয়তে রয়েছে। প্রয়োজন হল, ওজরের সময় নামায আদায় করার পদ্ধতি-সংশ্লিষ্ট শরয়ী বিধি-বিধানের ইলম যথাযথ হাছিল করা এবং সে অনুযায়ী আমল করা। সহজতা, আরামপ্রিয়তা এবং নিছক আন্দাজ ও ধারণার ভিত্তিতে এমনি এমনি সিদ্ধান্ত নিয়ে নেওয়া যে, আমার জন্য চেয়ারে বসে নামায পড়া জায়েয আছে এমনটি করা কখনই ঠিক নয়। এতে যেভাবে শরীয়তের ব্যাপারে একধরনের বেপরোয়া ভাব প্রকাশ পায় তেমনি নামাযের মত আযীমুশ শান ইবাদতের ক্ষেত্রে চরম পর্যায়ের উদাসীনতাও সাব্যস্ত হয়। ওযরের ক্ষেত্রে শরীয়তের উসূল ও মূলনীতি হল, যে কোনো ওযরের কারণেই কেউ মাযূর সাব্যস্ত হয় না। তাই মামুলী ওযরের কারণে নিজেকে মাযূর মনে করা বৈধ নয়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উসূল হল, যতটুকু ওজর ততটুকু রুখসত বা ছাড়। এমন নয় যে, এক ওজরের কারণে সকল ফরয থেকে ছুট্টি। যেমন, নামাযে দাঁড়ানোর সক্ষমতা নেই বলে এখন রুকু-সিজদাও মাফ। রুকু-সিজদা করতে পারে না বিধায় এখন কা‘দা (তাশাহহুদের জন্য যমিনে বসা)-ও মাফ বিষয়টি এমন নয়।
হাদীস শরীফে এসেছে, ইমরান ইবনে হুসাইন রা. বলেন
كَانَتْ بِي بَوَاسِيرُ، فَسَأَلْتُ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ عَنِ الصّلاَةِ، فَقَالَ: صَلِّ قَائِمًا، فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَقَاعِدًا، فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَعَلَى جَنْبٍ.
আমার অর্শরোগ ছিল। তাই আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি কীভাবে নামায পড়ব সে ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তুমি দাঁড়িয়ে নামায আদায় করবে। দাঁড়িয়ে পড়তে সক্ষম না হলে বসে বসে পড়বে। বসেও সক্ষম না হলে কাত হয়ে শুয়ে আদায় করবে। (সহীহ বুখারী, হাদীস ১১১৭)
দাঁড়িয়ে স্বাভাবিক নিয়মে রুকু-সিজদা করে নামায পড়তে পারেন না এমন ব্যক্তির নামাযের পদ্ধতির ব্যাপারে এ হাদীসে মৌলিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এ হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে আবদুল বার রাহ. বলেন
هَذَا يُبَيِّنُ لَكَ أَنّ الْقِيَامَ لَا يَسْقُطُ فَرْضُهُ إِلّا بِعَدَمِ الِاسْتِطَاعَةِ ثُمّ كَذَلِكَ الْقُعُودُ إِذَا لَمْ يَسْتَطِعْ ثُمّ كَذَلِكَ شَيْءٌ شَيْءٌ يَسْقُطُ عِنْدَ عَدَمِ الْقُدْرَةِ عَلَيْهِ.
এ হাদীস স্পষ্টভাবে বলে দিচ্ছে যে, কিয়াম করতে অক্ষম হওয়ার আগ পর্যন্ত নামাযে কিয়াম করা ফরয; তা বাদ দেওয়া যাবে না। তেমনি কা‘দা (বৈঠক)। তা আদায়ে অক্ষম হওয়ার আগ পর্যন্ত তা আদায় করার ফরয বিধান বহাল থাকবে। নামাযের অন্যান্য ফরয-ওয়াজিব আমলগুলোও এমনি। যখন যেটি আদায়ে অক্ষম হবে কেবল সেটিই তখন ছাড়া যাবে। (আততামহীদ ১/১৩৫)
উপরোক্ত হাদীস ও শরীয়তের অন্যান্য দলীলের ভিত্তিতে মুজতাহিদ ইমামগণ মাযূর ও অসুস্থ ব্যক্তির নামাযের যেসব বিধি-বিধান উল্লেখ করেছেন তার আলোকে চেয়ারে বসে নামাযের হুকুম সামনে তুলে ধরা হল।
অসুস্থ হলেই চেয়ারে নামায জায়েয হয়ে যায় না
—————————————————————–
এখানে বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, বর্তমানে সামান্য অসুস্থতা, সামান্য দুর্বলতা, হালকা ব্যথা-বেদনার অজুহাতে চেয়ারে বসে নামায আদায়ের প্রবণতা অনেকের মধ্যে লক্ষ করা যাচ্ছে। দিন দিন এ প্রবণতা বেড়েই চলেছে। ফলে মসজিদে মসজিদে চেয়ারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ চেয়ারে বসে নামায আদায়কারীদের মধ্যে এমন লোকও থাকেন, যারা হাঁটা-চলা, উঠা-বসা থেকে শুরু করে দৈনন্দিন কাজকর্ম স্বাভাবিকভাবেই করে যাচ্ছেন। কিন্তু নামাযের সময় তারা মাযূর হয়ে চেয়ার নিয়ে বসে পড়েন।
ভালোভাবে মনে রাখা দরকার, যে কোনো অসুস্থতার কারণেই চেয়ারে বসে নামায জায়েয হয়ে যায় না। বরং ইমরান ইবনে হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত পূর্বোক্ত হাদীসটিতে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে
فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَقَاعِدًا، فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَعَلَى جَنْبٍ.
‘দাঁড়িয়ে পড়তে সক্ষম না হলে বসে বসে পড়বে। বসে সক্ষম না হলে কাত হয়ে শুয়ে আদায় করবে।’
এর থেকে স্পষ্ট যে, বসে নামায পড়ার জন্য শর্ত হল দাঁড়ানোর সক্ষমতা না থাকা। তেমনি যমিনে/সমতলে না বসে পড়ার জন্যও শর্ত, যমিনে/সমতলে বসার সক্ষমতা না থাকা।
আর কোন্ প্রকারের অসুস্থতা অক্ষমতা গণ্য হবে কোন্টি গণ্য হবে না এবং এর মানদণ্ড কী ফকীহগণ তা নির্ণয় করে দিয়ে গেছেন।
মুসান্নাফে আবদুর রায্যাকে বর্ণিত হয়েছে, আমর ইবনে মায়মূন রাহ. বলেন, তার পিতা মায়মূন ইবনে মেহরান রাহ.-কে প্রশ্ন করা হল
مَا عَلَامَةُ مَا يُصَلِّي الْمَرِيضُ قَاعِدًا؟
অসুস্থ ব্যক্তি কখন বসে নামায পড়তে পারবে এর মানদণ্ড কী?
উত্তরে তিনি বলেন
إِذَا كَانَ لَا يَسْتَطِيعُ أَنْ يَقُومَ لِدُنْيَاهُ فَلْيُصَلِّ قَاعِدًا.
যখন সে তার দুনিয়াবী কাজের জন্য দাঁড়াতে পারে না এ অবস্থায় পৌঁছলে সে বসে নামায পড়তে পারবে। (মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক, বর্ণনা ৪১২৬)
হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ কিতাব আলমুহীতুল বুরহানীতে আছে
وقال عليه السلام لعمران بن حصين رضي الله عنه حين عاده وهو مريض: صل قائماً فإن لم تستطع فقاعداً، فإن لم تستطع فعلى الجنب تومىء إيماءً والمعنى في ذلك أن الطاعة بحسب الطاقة. وقوله: فإن عجز عن القيام وقدر على القعود يصلي المكتوبة قاعداً، لم يرد بهذا العجز العجز أصلاً لا محالة بحيث لا يمكنه القيام بأن يصير مقعداً، بل إذا عجز عنه أصلاً، أو قدر عليه إلا أنه يضعفه ذلك ضعفاً شديداً حتى تزيد علته لذلك، أو يجد وجعاً بذلك، أو يخاف إبطاء البرء، فهذا وما لو عجز عنه أصلاً سواء.
(আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২৬)
অর্থাৎ অক্ষমতার প্রথম অর্থ হল, কাজটির সামর্থ্যই না থাকা। আর যদি সামর্থ্য থাকে, কিন্তু এটি করলে সে বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে বা এর কারণে তার রোগ বেড়ে যায় কিংবা এর কারণে তীব্র ব্যথা অনুভব করে অথবা এমনটি করলে তার রোগ নিরাময় হতে বিলম্ব হবে এ অবস্থাগুলোই কেবল অক্ষমতার অন্তর্ভুক্ত।
ইমাম ইবনুল হুমাম রাহ. বলেন
(قوله إذا عجز المريض) المراد أعم من العجز الحقيقي حتى لو قدر على القيام، لكن يخاف بسببه إبطاء برء أو كان يجد ألما شديدا إذا قام جاز له تركه، فإن لحقه نوع مشقة لم يجز ترك القيام بسببها.
(ফাতহুল কাদীর ২/৩)
এখানে তিনি আরো স্পষ্টভাবে বলেছেন, দাঁড়ালে অনেক বেশি ব্যথা হলেই কেবল না দাঁড়িয়ে নামায পড়ার সুযোগ আছে। শুধু কিছু ব্যথা বা কষ্ট লাগার কারণেই কিয়ামের ফরয ছেড়ে দেওয়া জায়েয হবে না।
আর রোগ বেড়ে যাওয়া এবং রোগ নিরাময় হতে বিলম্ব হওয়ার বিষয়টি কীভাবে ফয়সালা করা হবে এর মূলনীতিও ফকীহগণ নির্ধারণ করে দিয়ে গেছেন। ইমাম ইবনুল হুমাম রাহ. বলেন
وتحقق الحرج منوط بزيادة المرض أو إبطاء البرء أو فساد عضو، ثم معرفة ذلك باجتهاد المريض، والاجتهاد غير مجرد الوهم، بل هو غلبة الظن عن أمارة أو تجربة أو بإخبار طبيب مسلم غير ظاهر الفسق.
(ফাতহুল কাদীর ২/৩৫১)
অর্থাৎ রোগ বেড়ে যাওয়া এবং রোগ নিরাময় হতে বিলম্ব হওয়ার ফয়সালা শুধু ধারণা বা অনুমানের উপর নির্ভর করে করা যাবে না। বরং স্পষ্ট কোনো আলামত বা রোগীর পূর্ব অভিজ্ঞতা কিংবা মুসলিম অভিজ্ঞ ভালো কোনো ডাক্তারের বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে তা নির্ণয় করতে হবে।
আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রাহ.-ও একই কথা বলেছেন। তিনি বলেন
(قوله خاف) أي غلب على ظنه بتجربة سابقة أو إخبار طبيب مسلم حاذق.
(রদ্দুল মুহতার ২/৯৬)
এখানে লক্ষণীয় যে, এক্ষেত্রে ডাক্তার মুসলিম হওয়ার শর্ত এজন্য করা হয়েছে যে, ডাক্তার যদি অমুসলিম হয় তাহলে একে তো তার কাছে নামাযের গুরুত্ব থাকবে না। দ্বিতীয়ত নামাযের পদ্ধতি সম্পর্কেও তার কোনো ধারণা থাকার কথা নয়। সেজন্য নামাযের আরকান যথাযথ আদায় করলে রোগীর শারীরিক ক্ষতি হবে কি না এ সম্পর্কেও তার বাস্তব ধারণা থকবে না। সবচেয়ে বড় কথা হল, দ্বীনী বিষয়ে কোনো অমুসলিমের উপর আস্থা রাখা যায় না। এজন্যই মুসলিম ডাক্তার শর্ত করা হয়েছে। তবে কখনো কখনো মুসলিম ডাক্তারের মাঝেও দ্বীনী বিষয়ে উদাসীনতা লক্ষ্য করা যায়। তাই চেয়ারে বসে নামায শুরু করার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শের পাশাপাশি নিজের অবস্থার পুরোপুরি বিবরণ দিয়ে কোনো মুফতী বা ফতোয়া বিভাগ থেকে মাসআলা জেনে নিতে হবে। নতুবা ক্ষেত্রবিশেষে নামায সহীহ নাও হতে পারে।
মোটকথা, অসুস্থ হলেই চেয়ারে বসে নামায জায়েয হয়ে যায় না। বরং অসুস্থতার ধরন হিসেবে এর হুকুমও ভিন্ন হয়ে থাকে। ১. এমন অসুস্থতা, যা সত্তেও চেয়ারে বসে পড়লে নামায শুদ্ধই হবে না। ২. এমন অসুস্থতা, যার কারণে নামাযের আংশিক চেয়ারে বসে আদায় করলে নামায ফাসেদ হবে না। ৩. এমন অসুস্থতা, যার কারণে পুরো নামায চেয়ারে বসে পড়া জায়েয।
যাদের জন্য চেয়ারে বসে নামায পড়া নাজায়েয
—————————————————————-
১. যে ব্যক্তি শরীয়তের দৃষ্টিতে মাযূর নয়, অর্থাৎ কিয়াম, রুকু-সিজদা করতে সক্ষম, তার জন্য যমিনে বা চেয়ারে বসে নামায আদায় করাই জায়েয নয়। অথচ কখনো কখনো দেখা যায়, এ ধরনের সুস্থ ব্যক্তিও সামনে চেয়ার পেয়ে চেয়ারে বসে নামায আদায় করে নেয়। ফলে তার নামাযই হয় না।
২. শুধু আরামের জন্য অথবা মামুলি কষ্টের বাহানায় চেয়ারে বসে নামায পড়লে নামায আদায় হবে না। এমনকি যমিনে বসে পড়লেও আদায় হবে না।
৩. যার পায়ে বা কোমরে ব্যথা। দাঁড়িয়ে স্বাভাবিক নিয়মে রুকু-সিজদা করে নামায পড়লে শরীরে ব্যথা লাগে। কিন্তু তার ব্যথা এ পরিমাণের নয় যে, তা অনেক বেশি। যা সহ্যের বাইরে; বরং এ ব্যথা নিয়ে সে কিয়াম ও রুকু-সিজদা করে নামায পড়তে পারে তবে তার জন্যও যমিনে বা চেয়ারে বসে নামায পড়ার কোনো সুযোগ নেই। এমন করলে নামায আদায় হবে না।
৪. যে কিছুটা অসুস্থ। কিন্তু তার অসুস্থতা এ পর্যায়ের নয় যে, সে কিয়াম ও রুকু-সিজদা করে নামায পড়তে সক্ষমই নয়, বা এভাবে নামায পড়লে তার রোগ বেড়ে যাবে কিংবা রোগ নিরাময় হতে বিলম্ব হবে এমনও নয়। এমন অল্প অসুস্থতার অজুহাতে যমিনে বা চেয়ারে বসে নামায পড়লে নামায আদায় হবে না।
৫. যে ব্যক্তি নামাযে কিয়াম তথা দাঁড়াতে সক্ষম। যমিনে সিজদাও করতে পারে। কিন্তু পা ভাঁজ করে তাশাহহুদের সুরতে বসতে পারে না। তবে পা ছড়িয়ে বা চারজানু হয়ে বা এক পা বিছিয়ে আরেক পা উঠিয়ে কিংবা এক পায়ের পাতা বিছিয়ে আরেক পা বের করে অথবা উভয় পা বের করে বা অন্য যে কোনো পদ্ধতিতে যমিনে বসতে পারে এবং যমিনে সিজদাও করতে পারে তার জন্যও চেয়ারে বসে নামায পড়া জায়েয নয়। সে যেভাবে সম্ভব বসেই যমিনে সিজদা করে নামায আদায় করবে এবং কিয়াম ও রুকুও যথানিয়মে আদায় করবে। পুরোপুরি সুন্নত তরিকায় তাশাহহুদের সুরতে বসতে না পারার অজুহাতে তার জন্য চেয়ারে বসে নামায পড়ার কোনো সুযোগ নেই। এমন ব্যক্তি যমিনে সিজদা না করে চেয়ারে বসে ইশারায় সিজদা করলে তার নামায সহীহ হবে না।
৬. যে ব্যক্তি নামাযে কিয়াম তথা দাঁড়িয়ে নামায আদায় করতে সক্ষম নয়, কিন্তু যমিনে বা সমতলে কোনো না কোনো পদ্ধতিতে বসতে পারে এবং যমিনে সিজদাও করতে পারে, তবে চেয়ারে বসে নামায শুরু করলে সিজদা ও কা‘দা (বৈঠক)-এর জন্য যমিনে নামতে সক্ষম নয় তার জন্যও চেয়ারে বসে নামায পড়া জায়েয নয়। এমন ব্যক্তি যেহেতু সমতলে বসে সিজদার ফরয আদায় করতে সক্ষম তাই শুরু থেকেই সে যমিনে বা সমতলে বসে যথানিয়মে সিজদা করে নামায আদায় করবে; নতুবা তার নামায আদায় হবে না।
৭. যে ব্যক্তি নামাযে কিয়াম তথা দাঁড়িয়ে নামায পড়তে সক্ষম, আবার যমিনে বা সমতলে বসতেও পারে এবং যমিনে সিজদাও করতে পারে, কিন্তু নামাযে দাঁড়ানো অবস্থা থেকে বসতে পারে না, তেমনি বসলে আবার দাঁড়াতে পারে না তার জন্যও চেয়ারে বসে পড়া জায়েয নয়। বরং সে পুরো নামায নিচে বসে আদায় করবে, যাতে যথানিয়মে যমিনে সিজদা করতে পারে; নতুবা তার নামায সহীহ হবে না।
নামাযের আংশিক চেয়ারে আদায় করার হুকুম
—————————————————————-
১. যে ব্যক্তি নামাযে কিয়াম তথা দাঁড়িয়ে নামায পড়তে সক্ষম নয়, কিন্তু যমিনে বা সমতলে কোনো না কোনোভাবে বসতে পারে এবং যমিনে সিজদাও করতে পারে। তার জন্য সিজদা ও কা‘দা (বৈঠক) যমিনে বসে যথানিয়মে আদায় করা জরুরি। এমন ব্যক্তি যদি সিজদার সময় চেয়ারে বসে ইশারায় সিজদা আদায় করে তবে তার নামায সহীহ হবে না; বরং এক্ষেত্রে সে পুরো নামাযই যমিনে বসে আদায় করবে। আর সে যদি এক্ষেত্রে সিজদা ও কা‘দা (বৈঠক) যমিনে বসে যথানিয়মে আদায় করে কিন্তু কিয়াম ও রুকুর সময় চেয়ারে বসে তবে তার নামায ফাসেদ না হলেও যমিনে বসে আদায় করতে সক্ষম হওয়া সত্তেও চেয়ারে বসার কারণে তার নামায মাকরূহ হবে।
আর এমন ব্যক্তি চেয়ারে বসে নামায শুরু করলে সিজদা ও কা‘দা (বৈঠক)-এর জন্য যমিনে নামতে না পারলে তার জন্য কিয়ামের সময় চেয়ারে বসাই নাজায়েয। বরং শুরু থেকেই তার যমিনে বসে নামায পড়া জরুরি; যা একটু আগেই উল্লেখ করা হয়েছে।
২. যে ব্যক্তি কিয়াম করতে সক্ষম এবং দাঁড়ানো থেকে চেয়ারে বসতেও পারে, কিন্তু যমিনে কোনো পদ্ধতিতেই বসতে পারে না এমন ব্যক্তির জন্য বিধান হল, সে যথা নিয়মে দাঁড়িয়ে নামায শুরু করবে। এরপর স্বাভাবিকভাবে রুকু করতে পারলে রুকুও করবে। তারপর অবশিষ্ট নামায চেয়ারে বসে পড়বে। কিন্তু এক্ষেত্রে কিয়াম করতে সক্ষম হওয়া সত্তে¡ও তার জন্য শুরু থেকেই চেয়ারে বসে নামায পড়া সহীহ নয়।
এখানে উল্লেখ্য যে, যে ব্যক্তি যমিনে সিজদা করতে সক্ষম নয় তার ব্যাপারে হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ মত হল, এমন ব্যক্তির উপর দাঁড়িয়ে নামায আদায় করা জরুরি নয়; বরং সে বসে ইশারায় নামায আদায় করতে পারে।
এ বক্তব্যটি যদিও একেবারে দলীলবিহীন নয়, কিন্তু অনেক মুহাক্কিক ফকীহের দৃষ্টিতে এই মাসআলায় দলীলের বিচারে ফিকহে হানাফীর ঐ বক্তব্য বেশি শক্তিশালী, যা ইমাম আবু হানীফা রাহ.-এর শাগরিদ ইমাম যুফার ইবনে হুযাইল রাহ.-এর মাযহাব। আর এটাই বাকি তিন ইমামের (ইমাম মালেক রাহ., ইমাম শাফেয়ী রাহ. এবং ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রাহ.) মাযহাব। আর তা হল, এমন ব্যক্তি (যে ব্যক্তি যমিনের উপর সিজদা করতে অক্ষম) যদি দাঁড়িয়ে নামায আদায় করতে সক্ষম হয় তাহলে তাকে দাঁড়িয়েই নামায আদায় করতে হবে। আর যেহেতু সে সিজদা করতে অক্ষম তাই সে ইশারায় সিজদা করবে (যদি রুকু করতেও অক্ষম হয় তাহলে রুকুও ইশারায় আদায় করবে)। যমিনে সিজদা করতে অক্ষম হওয়ার কারণে দাঁড়ানোর ফরয ছাড়া যাবে না।
হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম তাঁর একটি ফতোয়াতে এই মাসআলার উপর বিশদ আলোচনা করেছেন এবং ‘ফাতহুল কাদীর’ খ. ১ পৃ. ৪৬০, ‘আননাহরুল ফায়েক খ. ১ পৃ. ৩৩৭ এবং ‘ইলাউস সুনান খ. ৭ পৃ. ২০৩ ইত্যাদির বরাতে দালায়েলের আলোকে এই ‘কওল’ (বক্তব্য)-কেই শক্তিশালী বলেছেন যে, কিয়ামের ফরয আদায় থেকে শুধু ঐ ব্যক্তি ছাড় পাবে, যে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করতে অক্ষম। সিজদা করতে অক্ষম হওয়ার কারণে কিয়াম না করার ছাড় পাবে না। তিনি সেখানে বিশদভাবে ঐ কথারও খণ্ডন করেছেন যে, ‘শুধু সিজদার জন্য কিয়াম ফরয করা হয়েছে। তাই সিজদা করতে অক্ষম হলেই কিয়াম জরুরি থাকে না।’ তিনি একাধিক দলীল দ্বারা একথা প্রমাণ করেছেন যে, কিয়াম নামাযের একটি স্বতন্ত্র ফরয; তা শুধু সিজদার জন্য নয়।
এমনকি হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম ঐ ফতোয়ায় একথাও লিখেছেন যে, যে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে নামায শুরু করতে পারে, কিন্তু সিজদার জন্য যমিনে বসার পর আবার দাঁড়াতে তার অনেক কষ্ট হয়, এমন ব্যক্তিও কিয়াম (দাঁড়িয়ে নামায পড়া) একেবারে ছাড়বে না। বরং প্রথম রাকাত দাঁড়িয়ে আদায় করবে। এরপর উঠে দাঁড়াতে কষ্ট হওয়ার কারণে বাকি নামায বসে আদায় করবে।
এর সাথে সাথে হযরত দামাত বারাকাতুহুম এ-ও বলেছেন যে, যমিনের উপর সিজদা করতে অক্ষম কোনো মুসল্লী যদি ফিকহে হানাফীর প্রসিদ্ধ মত অনুযায়ী আমল করে এবং পুরা নামায বসে আদায় করে এবং ইশারায় রুকু-সিজদা করে তাহলে তার নামায ফাসেদ হয়েছে বলব না।
(لأن المسألة من الاجتهاديات، و القول المشهور و إن كان مرجوحا من حيث الدليل و لكنه ليس من الزلات المحضة، فله بعض الأدلة أيضا، مذكور في “مختصر اختلاف العلماء” ج ১ ص ৩২৫.)
৩. যে ব্যক্তি কিয়াম ও রুকু করতে সক্ষম এবং সরাসরি যমিনে বা সমতলে কোনো না কোনোভাবে বসতেও পারে, কিন্তু যমিনে সিজদা করতে পারে না, সে তো কিয়াম ও রুকু যথানিয়মেই আদায় করবে। এরপর যমিনে বসে যাবে। ইশারায় সিজদা আদায় করবে এবং তাশাহহুদ যমিনে বসেই আদায় করবে। এমন ব্যক্তি যেহেতু মাটিতে বা সমতলে বসতে পারে তাই তার জন্য যমিনে কা‘দা-এর পরীবর্তে চেয়ারে বসা মাকরূহ তাহরীমী। যা পরিহার করা কর্তব্য।
৪. যে ব্যক্তি নামাযে কিয়াম তথা দাঁড়াতে সক্ষম নয়, কিন্তু যমিনে বা সমতলে কোনো না কোনোভাবে বসতে পারে এবং যমিনে সিজদাও করতে পারে। সে যদি চেয়ারে বসে নামায আদায় করে এবং সিজদার জন্য চেয়ার থেকে নেমে মাটিতে সিজদা আদায় করে তবে এক্ষেত্রে তার সিজদা যথানিয়মে আদায় হলেও কা‘দা অর্থাৎ বৈঠক চেয়ারে আদায় করার কারণে নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে; যা পরিহার করা কর্তব্য।
পুরো নামায যার জন্য চেয়ারে বসে পড়া জায়েয
——————————————————————
যে ব্যক্তি নামাযের কিয়াম, রুকু-সিজদা ও কা‘দা (তাশাহহুদের জন্য বসা) কোনোটিই স্বাভাবিকভাবে আদায় করতে সক্ষম নয়; বরং শুধু চেয়ারেই বসতে পারে কেবল এমন অসুস্থ ব্যক্তির জন্য পুরো নামায চেয়ারে বসে আদায় করা জায়েয।
কিন্তু এক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, এই ব্যক্তি যে কিয়াম, রুকু-সিজদা ও কা‘দা (বৈঠক) সবগুলোই যথানিয়মে স্বাভাবিকভাবে আদায় করতে সক্ষম নয় তা বাস্তবসম্মত ও সুপ্রমাণিত হতে হবে। এর জন্য ডাক্তারের পরামর্শের পাশাপাশি কোনো মুফতী সাহেবকে নিজের অবস্থা পুরোপুরি জানিয়ে তার থেকে মাসআলা নিয়ে সে অনুযায়ী আমল করবে। নতুবা নিজে নিজে ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণে কখনো নামায নাও হতে পারে।
মোদ্দাকথা এই যে, যে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে নামায আদায় করতে অক্ষম তার জন্য বিকল্প পদ্ধতি হল, যমিনে বসে তা আদায় করা। আর যে রুকু-সিজদা করতে অক্ষম তার জন্য বিকল্প পন্থা হল, ইশারায় রুকু-সিজদা আদায় করা। আর যে ব্যক্তি যমিনে বসতে অক্ষম তার জন্য যমিনে বসে কা‘দা আদায়ের বিকল্প হল চেয়ারে বসা। কেবল প্রথম ও দ্বিতীয় ওযরের কারণে চেয়ারে বসা জায়েয নয়।
চেয়ারে বসে নামাযের ক্ষেত্রে সিজদা আদায়ের পদ্ধতি
————————————————————————-
যে ব্যক্তি যমিনে সিজদা করতে অক্ষম তার ব্যপারে হুকুম হল, সে ইশারায় সিজদা আদায় করবে। এমন মাযূর ব্যক্তি যদি বাস্তব ওযরেই চেয়ারে বসে নামায আদায় করে তাহলে সেও ইশারায়ই সিজদা করবে। সামনে তখতা বা টেবিল রেখে তাতে সিজদা করবে না। কেননা সিজদার জন্য সামনে টেবিল বা উঁচু বস্তু রাখা এবং তাতে সিজদা করার কোনো বিধান হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। অবশ্য এর দ্বারা যেহেতু ইশারার কাজ হয়ে যায় ফলে নামায আদায় হয়ে যাবে। উল্লেখ্য, ইশারায় সিজদা আদায় করার নিয়ম হল, রুকুর জন্য মাথা যতটুকু ঝোঁকাবে সিজদার জন্য তার চেয়ে একটু বেশি ঝোঁকানো।
আর সিজদার জন্য ইশারা করার সময় হাত হাঁটুতেই রাখবে। কেউ কেউ তখন যমিনে সিজদা করার মত হাত চেহারা বরাবর রাখে। এটি ভুল নিয়ম।
শেষ কথা
————–
সম্মানিত পাঠক! যদি উল্লিখিত মাসআলাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ে থাকেন তাহলে আশা করি এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে থাকবে যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে চেয়ারে বসে নামায আদায় করা একেবারেই নাজায়েয। এসব ক্ষেত্রে নামাযই শুদ্ধ হয় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নামাযের আংশিক চেয়ারে বসে আদায় করলে যদিও নামায ফাসেদ হয় না, কিন্তু তা মাকরূহ। কেবল একটি ক্ষেত্র এমন, যেখানে চেয়ারে বসে নামায আদায় করলে নামায আদায়ও হয়ে যায় এবং মাকরূহও হয় না।
এই বাস্তবতাটি যদি আমরা যথাযথ উপলব্ধি করতে পারি তাহলে এ বিষয়টি বুঝতে আমাদের কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয় যে, বর্তমানে মসজিদগুলোতে চেয়ারের যে ভিড় পরিলক্ষিত হচ্ছে (এবং দিন দিন যা বেড়েই চলেছে) এটা কেবল এজন্যই যে, মাসআলা জানা না থাকার কারণে এমন অনেক মুসল্লীও নামাযে চেয়ার ব্যবহার করে থাকেন, যাদের জন্য নামাযে চেয়ার ব্যবহার জায়েযই নয়। সম্মানিত মুসল্লীবৃন্দ যদি হিম্মত করে শরয়ী ওযর ব্যতীত নামাযে চেয়ার ব্যবহার পরিত্যাগ করেন এবং নামাযে চেয়ার ব্যবহারকে শরয়ী রুখসত (শরীয়ত কর্তৃক অনুমোদিত ছাড়) পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখেন তাহলে মসজিদগুলোতে চেয়ারের এই ভিড় হ্রাস পাবে ইনশাআল্লাহ। অধিকাংশ মসজিদে চেয়ারের কোনো প্রয়োজনও পড়বে না। আর এমনটিই হওয়া চাই, কেননা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যামানায়ও চেয়ারের অস্তিত্ব ছিল; বরং এরও বহু পূর্ব থেকে ছিল। আর প্রথম থেকেই মাযূর ও অসুস্থ মুসল্লী ছিলেন। কিন্তু ইতিহাসে এমন কোনো নজির পাওয়া যায় না যে, মসজিদগুলোতে চেয়ার পাতা থাকত। অথবা মাযূর মুসল্লীগণ চেয়ার নিয়ে এসে তাতে নামায আদায় করতেন। মসজিদে চেয়ার পেতে রাখা এবং চেয়ারে নামায আদায় করার যে প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে তা সম্পূর্ণ নতুন রেওয়াজ। এটাকে নিরুৎসাহিত করাই কাম্য। আর অনুসৃত পন্থার প্রতি মনোনিবেশ করার মাঝেই রয়েছে কল্যাণ।
যেই কঠিন প্রয়োজনে নামাযে চেয়ার ব্যবহারের সুযোগ বের হয়ে আসে সেক্ষেত্রে এ বিষয়টির প্রতিও খেয়াল রাখা চাই যে যদি উঁচু মোড়া, টুল ব্যবহারে কাজ হয়ে যায় তাহলে চেয়ার ব্যবহার করবে না। তেমনিভাবে হাতলবিহীন চেয়ারে যদি কাজ সেরে যায় তাহলে হাতলযুক্ত চেয়ার ব্যবহার থেকে বিরত থাকবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সুস্থ জীবন দান করুন। সর্বক্ষেত্রে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, খুলাফায়ে রাশেদীন এবং সাহাবায়ে কেরামের সুন্নত অবলম্বন করার তাওফীক দান করুন। বিদআত থেকে দূরে রাখুন। অন্য ধর্মাবলম্বীদের আচার-সভ্যতা ও রীতি-নীতি থেকে হেফাযত করুন। আমীন।
২৪-০৬-১৪৪১ হি.
১৮-০২-২০২০ ঈ.
[ মাসিক আলকাউসার ]